আবুধাবি: দুবাই ও আবুধাবির মতো সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) জাঁকজমকপূর্ণ শহরগুলো ক্রমবর্ধমান হারে বিদেশী পর্যটকদের আকর্ষণীয় করে যাচ্ছে। এর পেছনে রয়েছে দেশটির সরকারের নেয়া সুদূরপ্রসারি পরিকল্পনার বাস্তবায়ন। এ কারণে দিন দিন ফুলেফেঁপে ওঠা এ খাতে প্রতি বছর যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন কর্মসংস্থান। পর্যটন শিল্পে শুধু চলতি বছরেই প্রায় ২৪ হাজার নতুন কর্মী যোগ দেবেন বলে এক আর্থিক প্রতিবেদনে জানিয়েছে ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কাউন্সিল (ডব্লিউটিটিসি)।
একসময় জ্বালানি তেলের ওপর নির্ভরশীল ছিল ইউএইর অর্থনীতি। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় সে নির্ভরশীলতা থেকে সরে অর্থনীতি বৈচিত্র্যকরণ নীতি বাস্তবায়ন করেছে ইউএই। এর আওতায় ভ্রমণ ও ব্যবসাবান্ধব ভিসা ও লাইসেন্স সুবিধার কারণে দেশটি হয়ে উঠেছে কাঙ্ক্ষিত গন্তব্য। তবে এর সঙ্গে বিভিন্ন দেশ থেকে অবৈধভাবে পাচারকৃত অর্থেও বড় গন্তব্য হয়ে উঠেছে ইউএই।
ইউএইতে ২০২৪ সালে ভ্রমণ ও পর্যটন খাতে ২৩ হাজার ৬০০ কর্মসংস্থান তৈরি হবে বলে জানানো হয় প্রতিবেদনে। সব মিলিয়ে খাতটিতে মোট কর্মীর সংখ্যা ৮ লাখ ৩৩ হাজারে পৌঁছবে। পূর্বাভাস অনুযায়ী, আরব আমিরাতে শিল্পটির কর্মীর সংখ্যা গত বছরের তুলনায় ২ দশমিক ৯ শতাংশ বাড়বে, এতে ২০১৯ সালের তুলনায় এ সংখ্যা দাঁড়াবে ১৪ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি।
২০২৩ সালে দেশটিতে এ খাতে কর্মীর সংখ্যা ৫ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়ে ৮ লাখ ৯ হাজার ৩০০-এ দাঁড়িয়েছিল। ডব্লিউটিটিসির রিপোর্টে বলা হয়েছে, আগামী দশকে ইউএইর ভ্রমণ ও পর্যটন শিল্পে মোট কর্মসংস্থান দাঁড়াবে ৯ লাখ ২৮ হাজারের বেশি।
পর্যটনের ক্ষেত্রে ইউএই ভ্রমণ বেশ সহজ করেছে। সহজ ভিসা নীতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিভিন্ন ধরনের পর্যটন অফার। যার প্রতিফলন দেখা যায়, দুবাই ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টের ক্রমবর্ধমান যাত্রী সংখ্যায়। ২০২৩ সালে টানা দশম বছরের মতো বিশ্বের ব্যস্ততম আন্তর্জাতিক কেন্দ্র হিসেবে মুকুট ধরে রেখেছিল এ বিমানবন্দর। গত বছর ৮ কোটি ৬৯ যাত্রী এখানে সেবা পেয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৩১ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি।
কভিড-১৯ মহামারীকালে ইউএই শিথিল নীতি অবলম্বন করলেও ২০২০ সালে দেশটিতে পর্যটন খাতে ধস নামে। ওই সময় কর্মীদের বড় একটি অংশ কাজ হারিয়েছিলেন। তবে ২০২২ সালের কর্মসংস্থান অনেকটাই পুনরুদ্ধার হয়। ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে এ খাতে কর্মসংস্থান ১১ শতাংশ বেড়েছে।
চলতি বছর ইউএইর জিডিপিতে ভ্রমণ ও পর্যটন খাতের অবদান ২৩ হাজার ৬৪০ কোটি দিরহামে পৌঁছবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে ডব্লিউটিটিসি। এর মাধ্যমে খাতটি ইউএইর অর্থনীতির ১২ শতাংশের প্রতিনিধিত্ব করবে। সব মিলিয়ে প্রবৃদ্ধির হার ২০২৩ সাল থেকে ৭ দশমিক ৬ ও ২০১৯ সালের তুলনায় ২৩ শতাংশ বেশি হবে।
২০২৪ সালে দেশটিতে আন্তর্জাতিক দর্শনার্থীদের ব্যয় বছরে ৯ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়ে ১৯ হাজার ২০০ কোটি আমিরাতি দিরহামে পৌঁছবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। অভ্যন্তরীণ দর্শনার্থীদের ব্যয় ৪ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়ে ৫ হাজার ৮০০ কোটি দিরহাম হতে পারে। লক্ষ্য অনুসারে, ২০৩৪ সালের মধ্যে ইউএইর ভ্রমণ ও পর্যটন খাতে বার্ষিক জিডিপির অবদান হবে ২৭ হাজার ৫০০ কোটি দিরহামের বেশি। এ সময় খাতটি দেশটির অর্থনীতির প্রায় ১১ শতাংশের প্রতিনিধিত্ব করবে।