প্রচারণার অভাবে বিমানবন্দরকেন্দ্রীক সুবিধাগুলোর বিষয়ে যাত্রীদের অনেকে জানেন না বলে গণশুনানিতে তুলে ধরা হয়।
বিদেশ ফেরত যাত্রীদের লাগেজ পরিবহনের সংকট দূর করতে ঢাকায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে চালু হচ্ছে শাটল বাস সেবা।
বুধবার থেকে এ সেবা চালু হবে, যেটির মাধ্যমে বিমানবন্দরের টার্মিনাল থেকে রেলস্টেশন ও বাসস্ট্যান্ডে যেতে পারবেন যাত্রীরা।
শুরুতে বিআরটিসির দুটি বাস দিয়ে এ সেবা দেওয়া হবে। বাস দুটি রেলস্টেশন ও বাসস্ট্যান্ড হয়ে টার্মিনাল পর্যন্ত দিনভর ঘুরতে থাকবে।
মঙ্গলবার বিমানবন্দরে এক গণশুনানিতে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ারভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান এ সেবা চালুর তথ্য দিয়ে বলেন, এতে করে কোনো যাত্রী ব্যক্তিগত গাড়ি বা ট্যাক্সি নিতে না চাইলে এ বাসের সেবা নিতে পারবেন।
বর্তমানে এ বিমানবন্দর দিয়ে চলাচলকারী যাত্রীদের লাগেজ বহন করতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
বিমানবন্দরের টার্মিনাল ১ এর বর্হিগমন কনকোর্স হলে বেবিচক আয়োজিত এ গণশুনানিতে দেশের প্রধান এ বিমানবন্দর ব্যবহার করতে গিয়ে চলাচলকারীদের বিভিন্ন ভোগান্তিসহ ই-গেট চালু না হওয়া, বিমানবন্দর চত্বরের ভেতরে যানজট, ব্যাগেজ ব্যবস্থাপনাসহ নানা বিষয় উঠে আসে।
একই সঙ্গে বিমানবন্দরে যাত্রী ও প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য থাকা সুবিধাগুলোর বিষয়েও অনেকে জানেন না তুলে ধরা হয়।
শুনানিতে বলা হয়, বিমানবন্দরে থাকা টেলিফোন, বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের হটলাইন, ওয়েবসাইট এমনকি প্রবাসী কর্মীদের জন্য সরকার বিমানবন্দরের আশপাশে যে অস্থায়ী আবাসনের উদ্যোগ নিয়েছে সে সম্পর্কেও প্রচারণা না থাকায় যাত্রীরা তা জানতে পারেন না।
এসবের জবাব দিতে গিয়ে বেবিচক চেয়ারম্যান যাত্রীসেবার মান বাড়াতে তাদের যথাসাধ্য চেষ্টার কথা তুলে ধরতে গিয়ে শাটল বাস চালুর উদ্যোগের বিষয়টি বলেন। গণশুনানিতে দুজন যাত্রী কথা বলেন। এর বাইরে বেশির ভাগ প্রশ্ন ও অনুযোগ আসে সাংবাদিকদের দিক থেকে।
শুনানিতে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন বেবিচক চেয়ারম্যান ও বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম। সেখানে উপস্থিত কাস্টমস, ইমিগ্রেশন পুলিশ, বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরাও তাদের সংশ্লিষ্ট প্রশ্নের উত্তর দেন।
শুনানিতে বিমান বাংলাদেশসহ বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের প্রতিনিধি, বিমানবন্দরে সেবাদাতা বিভিন্ন সরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। তবে তারা কেউ প্রশ্ন করেননি।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে বিমানবন্দরের প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দেবব্রত ঘোষ বলেন, বিমানবন্দরের অদূরে খিলক্ষেত এলাকায় বিদেশগামী বা বিদেশ থেকে আসা প্রবাসীদের অস্থায়ীভাবে অবস্থানের জন্য যে বঙ্গবন্ধু ওয়েজ আর্নার্স সেন্টারটি করা হয়েছিল সেখানে যাওয়ার রাস্তাটি খারাপ থাকায় এখন সেখানকার সেবা সাময়িকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
ওই সেন্টারের কথা প্রবাসীরা জানেন কি না- বেবিচক চেয়ারম্যানের এমন প্রশ্নে প্রবাসী কল্যাণ কর্মকর্তা দেবব্রত বলেন, তারা তাদের ওয়েবসাইটে এবং বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে বিষয়টির প্রচারণা চালিয়েছেন।
খিলক্ষেত এলাকায় ২০২৩ সালে প্রায় ৩০ কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মাণ করা হয় বঙ্গবন্ধু ওয়েজ আর্নার্স সেন্টারটি। উদ্দেশ্য ছিল বিদেশগামীদের সুলভে সেবা দেওয়া। সেখানে ২০০ টাকায় প্রবাসী শ্রমিকদের থাকার সুযোগ রয়েছে। অথচ এই সুযোগের বিষয়টি প্রবাসীরা জানেন না বলে শুনানিতে তুলে ধরেন এক সাংবাদিক।
আরেক সাংবাদিক বলেন, কোনো যাত্রী যাতে প্রয়োজনে স্বজন বা অন্য কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন সেজন্য বিমানবন্দরের বিভিন্ন জায়গায় রাখা টেলিফোনগুলোর খবরও জানেন না অনেকে।
জবাবে বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক কামরুল বলেন, বিমানবন্দরের বিভিন্ন জায়গায় ১০টির মত টেলিফোন বসানো আছে বিনামূল্যে ব্যবহারের জন্য। এছাড়া বিমানবন্দরের প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক বা হেল্পডেস্কে গিয়ে সাহায্য চাইলেও তারা এসব ফোন দেখিয়ে দেওয়ার কথা।
নির্বাহী পরিচালক বলেন, গত এক বছরে বিমানবন্দরের হটলাইন নম্বরে (১৩৬০০) ৯ হাজার ৮২৭টি কলে অভিযোগ বা প্রশ্ন এসেছে যার মধ্যে ১২টি বাদে সবগুলোই নিষ্পত্তি করা হয়েছে। বেশির ভাগই ফ্লাইটের সময়সূচি বা ফ্লাইট সংক্রান্ত তথ্য জানতে চেয়ে ফোন করেছেন।
তিনি বিমানবন্দর সংক্রান্ত যে কোনো অভিযোগ হটলাইনে বা অ্যাপের মাধ্যমে জানানোর অনুরোধ করেন।
মো. ফয়সাল নামে একজন কাতার প্রবাসীর অভিযোগ, ঢাকার বিমানবন্দরে নেমেই দীর্ঘক্ষণ কাস্টমসের তল্লাশীর জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। বিশ্বের আর কোথাও এমন করা হয় কি না তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি।
জবাবে শুনানিতে উপস্থিত ঢাকা কাস্টমস হাউজের প্রতিনিধি বলেন, যাত্রীদের অনেকেই ঘোষণা ছাড়া স্বর্ণ বা অন্য মালামাল নিয়ে আসেন। সেজন্য তাদের এরকম তল্লাশি করতে হয়।
তবে এই ক্ষেত্রে যাত্রীদের ভোগান্তি যেন কমানো যায় সে বিষয়ে কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন বেবিচক চেয়ারম্যান।
শুনানিতে সৌদি আরবের দাম্মামগামী যাত্রী আনোয়ার হোসেন বলেন, এবার দাম্মাম থেকে ফেরার সময় তিনি যখন বিমান বাংলাদেশের এয়ারলাইন্সের টিকিট কাটতে যান তখন বলা হয় টিকেট নেই। পরে বেশ ভোগান্তি পেরিয়ে টিকেট পান তিনি। এরপর নির্ধারিত দিনে ফ্লাইটে উঠে দেখেন তার পাশের আসনটিই খালি। এরকম খালি আসন অন্তত ১০টি দেখেছেন বলে দাবি তার।
এর জবাবে বিমান বাংলাদেশের মহাব্যবস্থাক শাকিল মেরাজ বলেন, কোনো এয়ারলাইন্সেই সব আসন পরিপূর্ণ করে ফ্লাইট চালাতে পারে না। হয়ত শেষ সময়ে কোনো যাত্রী আসেননি, কেউ টিকেট বাতিল করেছেন কিংবা কেউ বিমানবন্দরে এসে ইমিগ্রেশন পার হতে পারেননি। এমন নানা কারণে ফ্লাইটের আট-দশটা আসন ফাঁকা যেতে পারে।
তিনি বলেন, এখন বিমানের টিকেট সব উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।
বিমানের ওয়েবসাইট ও অ্যাপ থেকে কাটার আহ্বান জানান তিনি।