এভিয়েশন অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এওএবি) সাধারণ সম্পাদক ও নভোএয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মফিজুর রহমান বলেছেন, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সকে হজ ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দিলে হজের বিমান ভাড়া বর্তমানের চেয়ে ৩০-৪০ শতাংশ কমে আসবে।
রাজধানীর একটি হোটেলে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের ঢাকা-জেদ্দা ফ্লাইট উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
মফিজুর রহমান বলেন, ২০১১ পর্যন্ত হজযাত্রীরা নিজের পছন্দের এয়ারলাইন্সে হজে যেতে পারতেন। এতে কম ভাড়ায় টিকিট পাওয়া যেতো। কিন্তু ২০১২ সাল থেকে বিমান বাংলাদেশ ও সৌদি এয়ারলাইন্স এই দায়িত্ব নিয়ে নেয়। তারাই হজের ভাড়া নির্ধারণ করে। কেন হজের মতো পবিত্র ভ্রমণে অতি মুনাফার লোভ করতে হবে? আমি মন্ত্রীকে অনুরোধ করে বলেছি, আপনি ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সকে আগামী হজের ফ্লাইট পরিচালনার দায়িত্ব দেন, দেখবেন তারা বর্তমানের চেয়ে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কম ভাড়ায় যাত্রী নিতে পারবে। ভবিষ্যতে নভোএয়ারও এই রুটে যাত্রী পরিবহন করবে বলে আশা করছি।
তিনি বলেন, জেদ্দা রুটে ফ্লাইট চালানো ইউএস-বাংলার জন্য বিরাট মাইলফলক। আমি আশা করব- শুধু জেদ্দা নয়, সৌদির রিয়াদ, মদিনাসহ অন্যান্য গন্তব্যেও ডানা মেলবে ইউএস-বাংলা। দেশে অনেক এয়ারলাইন্স আসে, আবার ঝরে যায়। দোয়া করবেন যেন নভোএয়ার ও ইউএস-বাংলা একসঙ্গে দীর্ঘপথ পারি দিতে পারে। আমি তাদের এই সফলতায় আন্তরিক মোবারকবাদ জানাই।
এর আগে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম, ইউএস-বাংলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ( সিইও) লুৎফর রহমান, বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী ফারুক খান ও দ্য মর্নিং বাংলাদেশের সম্পাদক কাজী ওয়াহিদুল আলমসহ আরও অনেকে।
হাব সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, হজযাত্রীরা প্রায়ই হজের অতিরিক্ত বিমানভাড়ার বিষয়ে অভিযোগ করেন। আমাদেরও মনে হয় এই ভাড়া বেশি। শুধু ১টি এয়ারলাইনস (বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স) এই ভাড়া নির্ধারণ করে। এই ভাড়া নির্ধারণে নৈতিক চর্চা হয় না। আমার পরামর্শ থাকবে হজের বিমান ভাড়া নির্ধারণে একটি টেকনিক্যাল কমিটি করার।
কমিটিতে এভিয়েশন খাত সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিবর্গ, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের প্রতিনিধি, বেবিচক ও মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের রাখার প্রস্তাব দেন তিনি।
এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, ভাড়া কমানোর জন্য আগামীতে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সেরও হজযাত্রী বহন করা উচিত। হজযাত্রীদের জন্য যত এয়ারলাইন্স আসবে, তারা তত সেবা পাবে, ভাড়া ততই কমবে।
ইউএস-বাংলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) লুৎফর রহমান বলেন, ২টি এয়ারক্রাফট নিয়ে শুরু করা ছোট্ট এয়ারলাইন্সটি আজ ২৪টি প্লেনে পরিণত প্রতিষ্ঠানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে ১২টি আন্তর্জাতিক গন্তব্যে যায়। আজ ১৩টি হবে। ২০০ পাইলট ও ২০০ ইঞ্জিনিয়ার তৈরির উদ্যোগ নিয়েছি। তারা শুধু ইউএস-বাংলায় না, সারা বিশ্বের এভিয়েশন খাতকে আলোকিত করবে। ইউএস-বাংলার এই সফলতা সম্ভব হয়েছে বেবিচক ও খাত সংশ্লিষ্টদের সহায়তায়। আশা করছি ঢাকা-জেদ্দা-ঢাকা রুটে ওমরাহ যাত্রী ও প্রবাসী শ্রমিকদের সাশ্রয়ী ভ্রমণ নিশ্চিত হবে।
বিশিষ্ট এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ ও দ্য মর্নিং বাংলাদেশের সম্পাদক কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, বাংলাদেশের প্রাইভেট সেক্টরে শত প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। এটাকে জয় করে ১০ বছর টিকে থাকা ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের জন্য অনেক বড় বিষয়। এই সেক্টরে অনেকে চলে গেছে, তবে ইউএস-বাংলা তার এমডির একক বলিষ্ঠতার কারণে এতদূর এগিয়েছে।
বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ফারুক খান বলেন, ২০১৪ সালে আমি ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের উদ্বোধন করেছিলাম, আমিই আজ ঢাকা-জেদ্দা রুটের বিমান উদ্বোধন করছি, এটা আমার জন্য অত্যন্ত আনন্দের। আমি আশা করছি ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স তাদের বহর আরও বড় করবে এবং আন্তর্জাতিক রুট সম্প্রসারণ করে আরও এগিয়ে যাবে।
উল্লেখ্য, সপ্তাহের প্রতিদিন ৪৩৬ আসনের এয়ারবাস ৩৩০-৩০০ দিয়ে সরাসরি ঢাকা থেকে জেদ্দায় ফ্লাইট পরিচালনা করবে ইউএস-বাংলা।