ইয়াসির আরাফাত, ঢাকা : আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট চালিয়ে শত কোটি টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনকে। আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট চালানো ২৩টি গন্তব্যের মধ্যে ১১টি রুটে লাভ আর ১২টি রুটে লোকসান দিচ্ছে সংস্থাটি। এর প্রেক্ষিতে লাভজনক রুটে ফ্লাইট বৃদ্ধি এবং লোকসানী রুটে ফ্লাইট কমানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে জাপানের নারিতা ও যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টারের একটি করে ফ্লাইট কমানো হয়েছে। অপর দিকে, লাভজনক ঢাকা-টরন্টো রুটে আগামী ৩১ অক্টোবর থেকে যোগ করা হবে আরেকটি ফ্লাইট।
বিমান সূত্র বলছে, ফ্লাইট বাড়ানো বা কমানো এটা রুটিন প্রসেস। কোনো সংস্থার সব রুটই লাভজনক হয় না। লাভজনক রুটের লাভ দিয়ে লোকসানী রুটের ব্যলেন্স করা হয়। চাইলেই লোকসানী রুটে বন্ধ করে দেয়া যায় না। প্রয়োজনে ফ্লাইট কমিয়ে দিয়ে অন্য রুটে ফ্লাইট চালানো হয়। এগুলো প্রতিনিয়ত মনিটরিং করা হয়। কিন্তু উড়োজাহাজ স্বল্পতার কারনে চাইলেও একাধিক লাভজনক রুটে ফ্লাইট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া যাচ্ছে না।
বিমানের তথ্য মতে, ২৩টি রুটের মধ্যে ১১টি রুটে লাভ হচ্ছে। সেগুলো হচ্ছে, ঢাকা থেকে লন্ডন, টরেন্টো, দুবাই, জেদ্দা, মদিনা, রিয়াদ, দাম্মাম, ব্যাংকক, কাঠমান্ডু, কুয়ালালামপুর ও সিঙ্গাপুর। ৬টি রুটে লোকসান হচ্ছে। সেগুলো হচ্ছে, ম্যানচেস্টার, কুয়েত, দিল্লি, কলকাতা, গুয়াংজু ও নারিতা। এ ছাড়া এক্সেস ব্যাগেজের ওজন সমন্বয় করে চারটি রুট লাভে আনার চেষ্টা হচ্ছে। সেগুলো হলো, আবুধাবি, মাসকাট, দোহা ও শারজাহ।
শুধুমাত্র ঢাকা-ম্যানচেস্টার রুটে প্রতিটি ফ্লাইটে লোকসান গুনতে হচ্ছে ১ কোটি ১০ লাখ। গত এক বছর এই রুটে বিমান লোকসান দিয়েছে ১৮৭ কোটি টাকা। গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি দুই মাসেই লোকসান দাঁড়িয়েছে ১৭২ কোটি টাকা। এছাড়া নারিতা রুটেও ফ্লাইট প্রতি লোকসান গুনতে হচ্ছে প্রায় কোটি টাকার মতো। ১ বছরে এই ৬ রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করে লোকসান হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবার শঙ্কা করছেন সংশ্লিস্টরা। এছাড়া রোম ও চেন্নাই রুটের বিষয় কোনো তথ্য দেয় নি সংস্থাটি। সে হিসেবে অর্ধেকের বেশি রুটে ফ্লাইট চালিয়ে লাভের মুখ দেখছে না বিমান। এছাড়া বিমানের বার্ষিক লাভ-ক্ষতির হিসাব নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।
চলতি বছরের মে মাসে জাতীয় সংসদে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে বিমানের দেওয়া প্রতিবেদন ও সংশ্লিস্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
যদিও বিমানের দাবী গত কয়েক বছর ধরেই তারা লাভে আছে। গত অর্থ বছরে (২০২২-২০২৩) বিমান ১০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় করেছে। এই বছরও(২০২৩-২০২৪) ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আয় হবে। শুধ কার্গো থেকেই ১২শ কোটি টাকা লাভ হবে।
গত সংসদীয় কমিটিতে দেয়া বিমানের তথ্যানুযায়ী, সংস্থাটিকে লাভজনক করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে বিমান। এ জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে ওই প্রতিবেদেনে বলা হয়, অনটাইম পারফরম্যান্সের ওপর গুরুত্বারোপ, যাত্রীপ্রতি রাজস্ব বৃদ্ধির ও ব্যয় সংকোচনের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এছাড়া, বোয়িং কোম্পানি থেকে নেওয়া নতুন উড়োজাহাজের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা হয়েছে। যাত্রীসেবার মানে দৃশ্যমান উন্নয়ন করা হয়েছে। যাত্রী পরিবহন সক্ষমতা বৃদ্ধির চেষ্টা অক্ষুন্ন রয়েছে। ভাড়ার সঙ্গে অ্যাকসেস ব্যাগেজের ওয়েট সমন্বয়পূর্বক লোড পেনাল্টি পরিহারের প্রক্রিয়া চলছে। দোহা, আবুধাবি, শারজাহ ও মাসকাট রুট লাভজনক করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রসঙ্গে বলা হয়, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। ২০২৫ থেকে ২০৩৫ অর্থবছররের পরিকল্পনানুযায়ি লাভজনক রুটে ফ্লাইট বাড়ানো এবং নতুন গন্তব্যে ফ্লাইট চালানোর উদ্যোগ নেয়া হবে। নতুন আন্তর্জাতিক গন্তব্যের মধ্যে মালে, কুনমিং, সিডনি, জাকার্তা, সিউল, উহান ও বাহরাইন অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। নিউইয়র্কে পুনরায় ফ্লাইট পরিচালনার কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। অভ্যন্তরীণ রুটে নতুন ফ্লাইট পরিচালনার পরিকল্পনায় উল্লেখযোগ্য গন্তব্যগুলো চট্টগ্রাম-যশোর, চট্টগ্রাম-সিলেট এবং ঢাকা-যশোর-কক্সবাজার এবং ঢাকা-বরিশাল-কক্সবাজার।
সংশ্লিস্টরা বলেছেন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের সবচেয়ে বেশি লোকসানে জাপানের নারিতা ও যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার রুটে। এই দুটি রুটে বর্তমানে সপ্তাহে তিনটি করে ফ্লাইট চলে। লোকসান কমাতে ৩১ অক্টোবর থেকে অর্থাৎ শীতকালীন সূচিতে সপ্তাহে চলবে কেবল দুটি করে ফ্লাইট। এছাড়া যাত্রী সংকটে ভারতে ফ্লাইট কমানো হয়েছে।