অবশেষে পদত্যাগ করলেন বিমানের বহুল আলোচিত সেই পাইলট ক্যাপ্টেন সাজিদ। তবে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে পদত্যাগ করলেও গোপনে যোগদান করেছেন একটি বেসরকারি বিমান সংস্থায়। নিয়ম অনুযায়ী কোন পাইলট বিমান ছেড়ে অন্য কোন বিমান সংস্থায় যোগদান করতে হলে তাকে অবশ্যই বিমানের কাছ থেকে অনুমতি কিংবা নো অবজেকশন সার্টিফিকেট (এনওসি) নিতে হবে। তাছাড়া তার বিরুদ্ধে বিমানের পাইলট নিয়োগ কেলেংকারীর ঘটনার তদন্ত চলমান। এই অবস্থায় মামলা নিস্পত্তি না হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি অন্য কোন বিমান সংস্থায় যোগদান করতে পারবেন না।
বিমান কতৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। কিভাবে অনুমতি কিংবা এনওসি ছাড়া ওই এয়ারলাইন্স বিমানের একজন অভিযুক্ত পাইলটকে তাদের বিমান সংস্থায় নিয়োগ দিয়েছেন তা নিয়ে বিষ্ময় প্রকাশ করেছে বিমান। এই ঘটনায় বিমানের পক্ষ থেকে বেসামরিক বিমান চলাচল কতৃপক্ষের ফ্লাইট অপারেশন বিভাগের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে জানাগেছে।
জানাগেছে ক্যাপ্টেন সাজিদ গত ২৭ অক্টোবর তার পদত্যাগ পত্র জমা দেন বিমানে। এরপর তিনি নতুন যোগদান করা এয়ারলাইন্সের এ-৩২০ মডেলের একটি এয়ারক্রাফটে পাইলট হিসাবে ফ্লাই করেন। তবে যোগদান করা এয়ারলাইন্স থেকে ক্যাপ্টেন সাজিদের যোগদানের বিষয়ে কোন তথ্য জানা যায়নি।
ক্যাপ্টেন সাজিদের অসঙ্গতি তদন্তে বিমানের কমিটি
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে ২০২১ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত প্রশিক্ষণ বিভাগে দায়িত্ব পালনকালে ক্যাপ্টেন সাজিদ আহমেদের অসঙ্গতি ও অনিয়ম তদন্ত করতে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল বিমান।
২০২৩ সালে বিমানের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছিল, গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে স্বজনপ্রীতি, আর্থিক বৈষম্য এবং ক্রুদের প্রশিক্ষণে ইচ্ছাকৃত বিলম্বের মতো অভিযোগ করা হয়েছে। এর ফলে আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় পর্যায়ে এয়ারলাইনটির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে।
এসব অভিযোগের গুরুত্ব এবং বিমানের কার্যক্রমের ওপর এসব অভিযোগের সম্ভাব্য নেতিবাচক প্রভাব বিবেচনায় অভিযোগগুলোর সত্যতা নিশ্চিত করার জন্য এবং কোনো অনিয়ম হয়ে থাকলে তা চিহ্নিত করার জন্য পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করতে এই কমিটি করা হয়েছে।
বিমানের কারিগরি প্রধান ক্যাপ্টেন তানভীর খুরশিদকে আহ্বায়ক এবং উপ-ব্যবস্থাপক (নিরাপত্তা) আনোয়ারুল হককে তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব করা হয়েছিল। পরবর্তীতে আনোয়ারুল হককে বাদ দিয়ে সিকিউরিটি বিভাগের ডিজিএম আব্দুর রহিমকে সদস্য সচিব করা হয়।
কমিটিতে সদস্য হিসেবে ছিলেন বিমানের ডেপুটি চিফ অব ফ্লাইট সেফটি ক্যাপ্টেন ইন্তেখাব হোসেন এবং রুট অ্যান্ড ফুয়েলের উপ-মহাব্যবস্থাপক লিয়াকত হোসেন।
৫ সদস্যের এই তদন্ত কমিটিতে বাংলাদেশ এয়ারলাইনস পাইলট অ্যাসোসিয়েশনের একজন প্রতিনিধি পর্যবেক্ষক হিসেবে ছিলেন।
ক্যাপ্টেন সাজিদের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে প্রকাশিত স্বজনপ্রীতির অভিযোগও তদন্ত করবে এই কমিটি। অভিযোগ তদন্তের পাশাপাশি সমস্যা চিহ্নিত ও তা থেকে উত্তরণের বিষয়েও সুপারিশ করবে এই কমিটি।
বিমানের পরিচালক (ফ্লাইট অপারেশনস) ক্যাপ্টেন সিদ্দিকুর রহমানের সই করা চিঠিতে এই তদন্ত কমিটিকে গণমাধ্যমে বিমানের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অভিযোগের বৈধতা মূল্যায়ন এবং এর কোনো আর্থিক প্রভাব থাকলে তা নির্ধারণ করতে বলা হয়েছে।
এর আগে ওই বছরের গত ৮ মার্চ ক্যাপ্টেন সাজিদকে প্রশিক্ষণ প্রধানের পদ থেকে সরিয়ে দেয় বিমান। ওই সময় তিনি বোয়িং-৭৭৭ এর লাইন পাইলট হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, স্ত্রী সাদিয়া আহমেদসহ আরও কয়েকজনের প্রতি পক্ষপাতমূলক আচরণ এবং নারী ককপিট ক্রুদের সঙ্গে বৈষম্যসহ একাধিক অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিমান কর্তৃপক্ষ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।
জানাগেছে ২০২৩ সালের গত ৬ মার্চ বিমানের বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজের জন্য পাইলট নিয়োগে অনিয়ম এবং অযোগ্য পাইলটদের বেতন বাবদ অর্থ অপচয়ের অভিযোগ তদন্তে ৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে বিমান।
ওই কমিটি বোয়িং ৭৭৭ এর ফার্স্ট অফিসার সাদিয়া আহমেদের এইচএসসি সনদের জালিয়াতির অভিযোগের বিষয়েও তদন্ত করেন।
২০২৩ সালের ১ মার্চ দ্য ডেইলি স্টারে ‘অযোগ্য পাইলট নিয়োগের মাশুল দিচ্ছে বিমান’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বিমান তাদের তদন্ত শুরু করে।