কলকাতাঃ সব স্মার্টফোনেই ‘ফ্লাইট মোড’ বা ‘এয়ারপ্লেন মোড’ রয়েছে। কিন্তু উড়োজাহাজে সফর করার সময় সবাই স্মার্টফোনটিকে এয়ারপ্লেন মোডে রাখেন কি?
সাধারণত এয়ারপ্লেন মোডে স্মার্টফোন সমস্ত নেটওয়ার্ক থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বিমান সফরে যেহেতু এমনিতেই মোবাইল ফোনে নেটওয়ার্ক থাকে না। তাই অনেকেই আলাদা করে নিজের ফোন এয়ারপ্লেন মোডে রাখেন না। বা রাখার প্রয়োজন মনে করেন না।
কিন্তু বিমান প্রশিক্ষকরা বলছেন, উড়োজাহাজে সফরকালে ফোন এয়ারপ্লেন মোডে রাখাটা জরুরি। কারণ তা না হলে উড়োজাহাজ আকাশে ওড়াকালীন ফোন থেকে নির্গত ইলকট্রোম্যাগনেটিক সিগন্যাল ক্রমাগত নেটওয়ার্কের খোঁজ করবে এবং উড়োজাহাজের নিজস্ব ইলকট্রোম্যাগনেটিক প্রযুক্তির কাজে বাধা সৃষ্টি করবে।
একটি ফোন থেকে নির্গত সিগন্যাল কী এমন ক্ষতি করতে পারে! বিষয়টি হলো, একটি ফোন থেকে নির্গত সিগন্যাল বিশেষ কোনো সমস্যা তৈরি না করলেও বেশিভাগ যাত্রীর ফোন থেকে নির্গত ইলকট্রোম্যাগনেটিক সিগন্যাল যদি একসাথে নেটওয়ার্কের খোঁজ করতে থাকে তবে তা উড়োজাহাজের যোগাযোগ এবং দিক নির্ণায়ক প্রযুক্তিকে প্রভাবিত করতে পারে।
তা থেকে ঝুঁকিও তৈরি হতে পারে বলে জানাচ্ছেন অ্যাভিয়েশন ট্রেনিং ইন্ডিয়ার উড়োজাহাজ প্রশিক্ষক রাজা গোপাল।
তিনি বলেন, ‘আধুনিক উড়োজাহাজে ওই ধরনের ঝুঁকি কমাতে পারে ঠিকই। তারও একটা সীমা আছে। একটা প্রমাণ সাইজের বিমানে কম করে দেড় শ’ যাত্রী থাকে। সকলেই যদি ভাবে একা আমার ফোন আর কী ক্ষতি করবে, তা হলেই ভাবুন বিষয়টা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে।’
তবে কি উড়োজাহাজে সফরে ফোন এয়ারপ্লেন মোডে না রাখলে সঙ্কটজনক পরিস্থিতি তৈরি হবে! রাজা গোপাল জানান, বড় সঙ্কটের ঝুঁকি খুবই কম। তবে তা বিমানের স্পর্শকাতর যন্ত্রাংশের ক্ষতি করতে পারে। ককপিটের সাথে গ্রাউন্ড কন্ট্রোলের যে যোগাযোগ প্রক্রিয়া তাকে ব্যাহত করতে পারে।
বিষয়টি আরো ব্যাখ্যা করে রাজা গোপাল বলেন, ‘উড়োজাহাজে ওঠা-নামার সময়ে বিশেষ করে ফোন এয়ারপ্লেন মোডে রাখা জরুরি। উড়োজাহাজের গতি এবং ক্রমাগত বাড়তে থাকা উচ্চতার জন্য ওই সময়ে ফোন বিভিন্ন টাওয়ার থেকে সিগন্যাল নিতে থাকে। প্রতি মুহূর্তে বদলাতে থাকে টাওয়ার। অন্য দিকে, বিমানও সেই সময়ে গ্রাউন্ড কন্ট্রোলের সাথে নিয়মিত যোগাযোগে থাকে। রেডিয়ো অল্টিমিটারের মাধ্যমে চার গিগা হার্টজ রেঞ্জে চলে ওই যোগাযোগ প্রক্রিয়া। যা প্রায় মোবাইলের ফাইভ জি সিগন্যালের সমান। মোবাইলের সিগন্যাল সেই যোগাযোগকে ব্যাহত করতে পারে।’
রাজা গোপালের মতে, ‘উড়োজাহাজ সফরে ফোনকে এয়ারপ্লেন মোডে রাখার কাজটা আদতে খুব ছোট্ট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ কাজ। উড়োজাহাজে যারা সফর করছেন, তাদের প্রত্যেকের এবং আপনার নিজের নিরাপত্তার কথা ভেবে এটা করা জরুরি।’
তবে এছাড়াও উড়োজাহাজে সফরকালে ফোন এয়ারপ্লেন মোডে না রাখলে আরো সমস্যা হতে পারে।
হায়দরাবাদের গ্লেনিগলস হাসপাতালের ক্রিটিকাল কেয়ার বিভাগের প্রধান চিকিৎসক মনীন্দ্র বলছেন, ‘যাত্রী নিরাপত্তার বিষয়টি ছাড়াও উড়োজাহাজে সফরে ফোন এয়ারপ্লেন মোডে না রাখলে শারীরিক সমস্যাও হতে পারে। উড়োজাহাজ সফরে বহু যাত্রীই কিছুটা উদ্বেগে থাকেন। ফোন থেকে নির্গত ইলকট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন মানসিক চাপের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। যা যাত্রীদের উদ্বেগ আরো বাড়িয়ে দিতে পারে।’
চিকিৎসকেরা বলছেন, উড়োজাহাজে সফরের সময়টুকু বরং ফোনের ব্যবহার না করে বিশ্রামে কাজে লাগান। হালকা মেজাজের বই পড়তে পারেন। ঘুমোতে পারেন, এমনকি মেডিটেশনও করার পরামর্শ দিচ্ছেন তারা।