
জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার অভিযোগে দায়েরকৃত দুটি হত্যা মামলার অন্যতম প্রধান আসামিকে দিয়ে ফ্লাইট করাচ্ছে বিমান ম্যানেজমেন্ট । আসামির নাম মামুনুর রশিদ জুবিন। বর্তমানে বিমানের ফ্লাইট সার্ভিস বিভাগে কেবিন ক্রু হিসেবে কাজ করছেন তিনি। একই সঙ্গে তিনি পতিত ও ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন বাংলাদেশ কেবিন ক্রু এসোসিয়েশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
শুধু ফ্লাইট পরিচালনাই নয়, এই আসামির নেতৃত্বে আজ প্রকাশ্যে কেবিন ক্রু এসোসিয়েশনের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিমানে। অথচ ফ্যাসিস্ট সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন এই কেবিন ক্রু ইউনিয়নের বিরুদ্ধে জুলাই আগষ্টের গণঅভ্যূত্থানের সময় বিমানের কেবিন ক্রুদের বিরুদ্ধে বিভিন্নভাবে দমন ও নিপিড়নের অভিযোগ আছে। গণআন্দোলনের সময় এই ইউনিয়নের বিরুদ্ধে সাবেক ফ্যাসিস্ট সরকারের বিভিন্ন কর্মসুচি পালনেরও অভিযোগ আছে।
জানাগেছে হত্যা মামলা দায়ের পর কিছুদিন কেবিন ক্রু জুবিনকে ফ্লাইট থেকে অফলোড করা হলেও বিমানের নতুন পরিচালক (প্রশাসন) যোগ দিয়ে ফের তাকে ফ্লাইট দিয়েছে। এই ঘটনায় পুরো বিমান জুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।
এ বিষয়ে বিমানের পরিচালক ফ্লাইট অপারেশন আবদুর রফিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি যুগান্তরকে বলেন, আমি বিমানের পরিচালক। কাকে কখন ফ্লাইট দেওয়া হবে এটা আমি জানি। হত্যা মামলার আসামি কিভাবে ফ্লাইটে যাবে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আপনি কি আমাকে জেরা করছেন?
অভিযোগ আছে গত বছর ছাত্র জনতার গণআন্দোলন দমনে জুবিনের বড় ধরনের ভুমিকা ছিল বিমানে। জুবিনের মাধ্যমে শিডিউলিং নিয়ন্ত্রণ করে বিভিন্ন রুটে স্মাগলিংয়েরও নানা অভিযোগ রয়েছে।
পতিত আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা সাইফুজ্জামান শেখর, শেখ রেহানা, পতুল এবং আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে জুবিন নিয়মিত ফ্লাইটে যাওয়া আসা করতেন। তাদের সঙ্গে ছবি তুলে সেই ছবি ফেসবুকে আফলোড করে তিনি গোটা বিমানে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন।
তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত একটি মামলায় প্রধান আসামি পলাতক সাবেক এমপি মোহাম্মদ এ আরাফাত সহ ৬২ জন। সেখানে জুবিনের অবস্থান ৪৭ এবং দ্বিতীয় মামলার প্রধান আসামি পতিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহ ১৫৪ জন। এই মামলায় জুবিনের অবস্থান ৭৪ নাম্বার।
অভিযোগ আছে বিমানের পরিচালক প্রশাসন আবদুর রফিক যোগদান করেই মামলা থেকে জুবিনের নাম কাটাতে রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন নেতার মাধ্যমে তদবির চালাচ্ছেন ।
এদিকে মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারী হওয়ার আগেই জুবিন বিমানের ফ্লাইট ডিউটি নিয়ে দেশত্যাগ করে বিদেশে পালিয়ে গিয়ে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করবে এমন আশংকা করছেন বিমানের ফ্লাইট সার্ভিস বিভাগ। এ কারণে বিমানের উর্ধতন কতৃপক্ষের নিদের্শে জুবিনকে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে সব ধরনের ফ্লাইট ডিউটি থেকে অপসারণ করে।
কিন্তু অভিযোগ আছে বিমানের প্রশাসন শাখার একটি সিন্ডিকেটকে মোটা অঙ্কের ঘুস দিয়ে গত সপ্তাহে তিনি সৌদি আরবের রিয়াদ স্টেশনের ফ্লাইট পরিচালনা করেন।
এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে সম্প্রতি বিমানের নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসেরও অভিযোগ উঠেছে।