
কক্সবাজার : টানা ছুটির ফাঁদে পড়তে যাচ্ছে দেশ। এই টানা ছুটিতে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত শহর কক্সবাজারে লাখো পর্যটকের ঢল নামবে বলে আশা করছেন পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
ঈদের আগে মহান স্বাধীনতা দিবস আর সাপ্তাহিক ছুটি মিলে এবার ঈদুল ফিতরের টানা ১১ দিনের ছুটি রয়েছে।
ইতিমধ্যে কক্সবাজারের হোটেল-মোটেল বুকিং চলছে বলে জানিয়েছেন তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইস লিমিটেডের বিপণন ব্যবস্থাপক ইমতিয়াজ নুর সোমেল।
তার মতে, ১ এপ্রিল থেকে ৫ এপ্রিল কক্সবাজারে পর্যটক সমাগম বাড়বে। এরইমধ্যে তারকা হোটেলগুলোতে ১-২ এপ্রিলের জন্য ৬০-৬৫ শতাংশ রুম বুকিং হয়ে গেছে। আর ৩-৪ এপ্রিলের বুকিং এসেছে ৯০-৯৫ শতাংশ। ৫ এপ্রিল আবার ৫০-৬০ শতাংশে নেমেছে। এ পাঁচদিনে গড়ে ৭০-৮০ শতাংশ রুম বুকিং থাকবে বলে আশা করা যায়।
কক্সবাজার ট্যুরিস্ট ক্লাব ও ট্যুরস অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন (টুয়াক) সভাপতি রেজাউল করিম বলেন, ‘পরিচ্ছন্ন ভ্রমণপিয়াসীরা ভোগান্তি এড়িয়ে নিরাপদ অবকাশ যাপনে পছন্দের হোটেল-মোটেল-কটেজে এরইমধ্যে বুকিং দিয়েছেন। এতে গরমেও পর্যটন ব্যবসা চাঙা হওয়ার ইঙ্গিত পাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।
পর্যটন উদ্যোক্তা মিজানুর রহমান মিল্কী জানান, কক্সবাজারে তারকা ও নন-তারকা, গেস্ট হাউজ ও কটেজ মিলে অন্তত ৫০০ আবাসিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব আবাসনে দৈনিক সোয়া লাখের বেশি অতিথি অবস্থান করতে পারেন। তবে, তারকা হোটেলের পরিমাণ হাতেগোনা অর্ধশতের মতো। গেস্ট হাউজ, ফ্ল্যাট, স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্ট এবং কটেজ শ্রেণির আবাসন বেশি। এখানে নিম্ন ও মধ্যবিত্তরাই বেশি আতিথেয়তা নেন। এসব হোটেলে পর্যটক বাড়লে কক্সবাজার লোকারণ্য হয়।
এদিকে, পর্যটকদের সমুদ্রস্নানে নিরাপত্তায় প্রস্তুতি নিয়েছে লাইফ গার্ড সংস্থাও। কক্সবাজার সী সেফ লাইফ গার্ড সংস্থার সিনিয়র লাইফ গার্ড জয়নাল আবেদীন ভূট্টো বলেন, ঈদের মৌসুমে প্রচুর পরিমাণে পর্যটক আসবে কক্সবাজারে। তাদের সমুদ্রে নামার আগে অবশ্যই লাইফ গার্ডের নির্দেশনা মেনে চলা উচিত।
সরেজমিন জানা গেছে, প্রতিবছরের মতো এবারও ঈদ অতিথি বরণে হোটেল-মোটেল সাজানো হচ্ছে। সবকিছুতেই যেন বাড়তি মনোযোগ। অনেকে ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করছেন ব্যবহার্য পণ্য। রুমে দেওয়া হচ্ছে নতুন রং। জেলা সদরের বাইরেও হিমছড়ি, দরিয়ানগর, ইনানী, মহেশখালী, বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কসহ জেলার সব পর্যটন স্পটগুলোকে ইজারাদাররা সাজাচ্ছেন নতুন করে।
হোটেল সি-নাইট গেস্ট হাউজের ব্যবস্থাপক শফিক ফরাজী বলেন, ‘আমাদেরও কিছু কিছু বুকিং আসছে। সবখানে খবরাখবর নিয়ে ৫০ শতাংশ আগাম বুকিং দিলেও বাকি রুম ওয়াকিং গেস্টদের জন্য রাখা হচ্ছে। চাহিদা বাড়লে রুম ভাড়ায় ডিসকাউন্ট দেওয়া লাগে না।’
কক্স-টুডের ব্যবস্থাপক আবু তালেব শাহ বলেন, রমজান মাসে পর্যটক কম থাকায় হোটেল সংস্কারের কাজ চলছে। যাতে ঈদে পর্যটকদের নতুনভাবে বরণ করা যায়। আর
কক্সবাজার হোটেল ও গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, আবহাওয়া যা-ই থাক, ঈদুল ফিতরে পর্যটন আবারও চাঙা হবে এমনটি বিশ্বাস। তবে, বন্ধ পড়া ১১ দিনই ব্যবসা জমলে পর্যটন ব্যবসায়ীরা লাভবান হতো।
কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী বলেন, অতীতে প্রতি ঈদের ছুটিতে পর্যটকের ভিড় বেড়েছে কক্সবাজারে। এবারও এমনটি হতে পারে। এসময়ে বৃষ্টি হলে সৈকতের চিত্র আরও মোহনীয় হয়ে উঠবে। ঈদ উপলক্ষে পর্যটকে টইটম্বুর হবে বেলাভূমি এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের আপেল মাহমুদ (অতিরিক্ত ডিআইজি)জানান, পর্যটক যা-ই আসুক, সব পর্যটন স্পটগুলোতে কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রস্তুতি শুরু করেছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। আগত পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও অপরাধ দমনে জেলা পুলিশের সহযোগিতায় কয়েকটি ভাগে সাজানো হচ্ছে ট্যুরিস্ট পুলিশকে। পাশাপাশি সৈকতে বিপদাপন্নদের উদ্ধারকারী লাইফগার্ডদের প্রশিক্ষণ আরও জোরদার করা হয়েছে। টেকনাফ ও ইনানীসহ সব পর্যটন স্পটে ট্যুরিস্ট পুলিশ দায়িত্বপালন করবে বলেও জানান তিনি।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন জানান, ভ্রমণকারীদের বিচরণ নির্বিঘ্ন করতে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের একাধিক টিম টহলে থাকবে। পুলিশ-র্যাবসহ সাদা পোশাকের শৃঙ্খলা বাহিনীও টহলে থাকবে।