
বিশেষ প্রতিনিধি : ১৬ দিন শূন্য থাকার পর প্রধান প্রকৌশলী পেতে যাচ্ছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃ (বেবিচক। আজ সোমবার (৭ এপ্রিল) বেবিচকের বোর্ড সভায় নির্ধারণ হবে কে হবেন পরবর্তী প্রধান প্রকৌশলী। তবে এবার প্রধান প্রকৌশলী পদ নিয়ে ব্যাপক জলঘোলা হয়েছে।
সাবেক প্রধান প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা, পরবর্তীকালে তাকেই পুনরায় আরও এক বছর চুক্তিতে মেয়াদ বাড়ানো, মন্ত্রণালয়ের আপত্তি—সব মিলিয়ে বেবিচকের অন্যতম শীর্ষ এই পদটি নিয়ে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। এ কারণে আজ সোমবারের বোর্ড সভায় কে হবেন পরবর্তী প্রধান প্রকৌশলী, তা নিয়ে বেবিচকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে প্রবল আগ্রহের জন্ম হয়েছে। রবিবার (৬ এপ্রিল) দিনভর এ নিয়ে আলোচনা ছিল তুঙ্গে।
বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মঞ্জুর কবীর ভুঁইয়া বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে যিনি ভালো, সৎ, যোগ্য এবং সবার কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হবে, আমরা তাকেই এই পদে বসাবো।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এখানে আগ্রহের বিষয় নয়, আমরা ব্যক্তিকেন্দ্রিক কোনও কিছু দেখবো না। যাকে নির্বাচিত করা হবে, প্রতিষ্ঠানের স্বার্থেই করা হবে।’
এদিকে প্রধান প্রকৌশলী পদে প্রতিদ্বন্দ্বী জাকারিয়া হোসেনের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে তিনি ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তার ভাইও অপর একটি ফ্যাসিস্ট দল জাতীয় পার্টির রাজনীতি করেন।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন ছাত্র জনতার গণআন্দোলন ও জুলাই অভ্যুত্থানের পর ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে এখন সবচেয়ে ঘৃণিত। জাতীয় পার্টিও আওয়ামী লীগের অন্যতম দোসর। এরকম দুটি দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে এরকম একটি পরিবারের একজন সদস্যের কাছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের একটি জন গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শ কাতর বিভাগ তুলে দেওয়া কতটা সমীচীন হবে তা নিয়েও জল্পনা কল্পনা শুরু হয়ে গেছে।
বেবিচক সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ২৪ নভেম্বর দুদকের পক্ষ থেকে দুর্নীতির অনুসন্ধান চলা অবস্থায় হাবিবুর রহমানকে প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়। তখন থেকে শুরু হয় বিতর্ক। দুর্নীতির অনুসন্ধান চলা অবস্থায় তার পদোন্নতি নিয়ে বেবিচকজুড়ে ক্ষোভও সৃষ্টি হয়। এরই মাঝে গত ২৭ জানুয়ারি ৮১২ কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগে হাবিবুর রহমানসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে দুদক। হাবিবুর রহমানসহ এই মামলার আট আসামি যেন দেশত্যাগ করতে না পারেন, সেজন্য নিষেধাজ্ঞাও জারি করে আদালত। মামলার ঠিক আগের দিন গত ২৬ জানুয়ারি হাবিবুর রহমান দুই বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেতে আবেদন করেন। এ নিয়ে আবারও শুরু হয় বিতর্ক। হাবিবুর রহমানের দুর্নীতির ফিরিস্তি তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা ও মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর অভিযোগ কর হয়।
এদিকে বেবিচকের নাম প্রকাশ না করা শর্তে একাধিক কর্মকর্তা জানান, এ পদে কে দায়িত্ব পাচ্ছেন তা চূড়ান্ত হবে আজ সোমবার (৭ এপ্রিল) বোর্ড সভায়। প্রাথমিক তালিকায় রয়েছেন—মো. জাকারিয়া হোসেন ও শুভাশিষ বড়ুয়া। এ ছাড়া এই তালিকায় সাবেক প্রধান প্রকৌশলী শহিদুল আফরোজ। অভিযোগ রয়েছে, শহিদুল আফরোজ প্রধান প্রকৌশলী থাকাকালীন তাকে একটি মামলায় জড়ানো হয়। পরবর্তীকালে বিভাগীয় তদন্তে তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হন। তিনিও প্রধান প্রকৌশলী হতে পারেন বলে আলোচনা রয়েছে।
একটি গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টে দেখা গেছে প্রাথমিক তালিকায় থাকা তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জাকারিয়া হোসেন ছাত্র জীবনে কোন রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা না থাকলেও বর্তমানে তিনি ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের মতাদর্শী। একই সঙ্গে তার ভাই ওয়ালি রহমান রিপন অপর ফেসিস্ট জাতীয় পার্টির নেতা।
তার বিরুদ্ধে প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ অনিয়ম দুর্নীতির বেশ কিছু অভিযোগ দুর্নীতি দমন কমিশনে তদন্তাধীন আছে। তিনি বর্তমানে শাহজালাল বিমানবন্দর থার্ড টার্মিনাল প্রকল্পের পিডি। ঢাকার বাইরে বিভিন্ন বিমানবন্দরের প্রকল্পগুলোতে কাজ করার সময় তার বিরুদ্ধে ঠিকাদার দের কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণসহ অনিয়নম দুর্নীতির অভিযোগ আছে বলে ওই গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। অপরদিকে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শুভাশিস বড়ুয়ার বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোন তদন্ত সংস্থার কাছ থেকে কোন ধরনের অভিযোগ পাওয়া যায়নি। সাবেক প্রধান প্রকৌশলী শহিদুল আফরোজ এর বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের একটি মামলা আছে। ওই মামলায় তিনি কারাগারেও ছিলেন। তবে বর্তমানে মামলাটি নিষ্কৃতি হয়ে গেছে বলে জানা গেছে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে আর কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি।