
সৌদি আরবে নিয়োগ বিলম্বের কারণে ফেব্রুয়ারিতে ব্যাহত হয়েছিল প্রবাসী কর্মীদের বিদেশ গমন। তবে এক মাস পর ফের চাঙা হয়েছে বাংলাদেশের বৈদেশিক কর্মসংস্থান। চলতি বছরের মার্চে এক লাখেরও বেশি কর্মী বিদেশে গেছেন।
রিয়াদে বাংলাদেশ দূতাবাস সিঙ্গেল ভিসাধারীদের জন্য দূতাবাসের সত্যায়ন ফের বাধ্যতামূলক করার পর এই বিলম্ব শুরু হয়েছে।
তবে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য বলছে, জমে থাকা ভিসা প্রক্রিয়াকরণের পর দেশটিতে নিয়োগ ফেব্রুয়ারির তুলনায় ৬৮ শতাংশ এবং আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় এই হার ৪১ শতাংশ বেড়েছে।
তবে এই প্রত্যাবর্তন সত্ত্বেও সৌদি আরবের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরতা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। মার্চে মোট প্রবাসী কর্মসংস্থানের ৭৭ শতাংশই হয়েছে দেশটিতে।
গত মাসে সৌদি আরব ৮০ হাজার ৬৬৩ জন কর্মী নিয়োগ দিয়েছে; ফেব্রুয়ারিতে এ সংখ্যা ছিল ৪৪ হাজার ২৫৮ জন। প্রবাসী কর্মী নিওগে এরপরেই আছে কাতার (৯ হাজার ৫৪ জন), সিঙ্গাপুর, কুয়েত ও জর্ডান।
নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি ও বিশৃঙ্খলার অভিযোগে মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই), ওমান ও বাহরাইনের মতো অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্যগুলো বন্ধ রয়েছে।
খাতসংশ্লিষ্টরা সরকারকে এসব বাজার ফের খুলে দেওয়ার জন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালানোর এবং ইউরোপে নতুন গন্তব্য অনুসন্ধানের আহ্বান জানিয়েছেন। ইউরোপে দক্ষ শ্রমিকের চাহিদা বেশি।
মধ্যপ্রাচ্যে যেসব কাজ পাওয়া যায়, তার বেশিরভাগ কাজই এখনও স্বল্প দক্ষ, যেমন নির্মাণ, পরিচ্ছন্নতা ও গৃহকর্মীর কাজ। এসব কাজে মাসিক বেতন সাধারণত ২৫ থেকে ৩৫ হাজার টাকার মধ্যে হয়।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অভ ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজ-এর (বায়রা) সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মো. টিপু সুলতান টিবিএসকে বলেন, ‘সম্প্রতি সিঙ্গেল ভিসাধারীদের জন্য রিয়াদের বাংলাদেশ দূতাবাসে সত্যায়ন প্রক্রিয়া বাধ্যতামূলক করায় নিয়োগ প্রক্রিয়া ধীর হয়ে গিয়েছিল। তবে আমাদের দাবির পর বিএমইটি কর্তৃপক্ষ জমে থাকা ভিসা প্রসেস করার অনুমতি দেয়, যার ফলে সামগ্রিকভাবে নিয়োগ বেড়েছে।’
তিনি আরও বলেন, সিঙ্গেল ভিসার সত্যায়ন এখন নতুন সরকারি নির্দেশনায় অব্যাহত থাকবে। তবে নারী কর্মীদের জন্য অভিবাসন প্রক্রিয়া এখনো ধীর, যার কারণে গত কয়েক বছরে নিয়োগ কম হয়েছে।
বাংলাদেশি কর্মীদের সাধারণত দুইভাবে সৌদি আরবের ভিসা দেওয়া হয়—সিঙ্গেল ভিসা ও গ্রুপ ভিসা। একসাথে ২৫ জন বা তার বেশি কর্মী একই প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পেলে গ্রুপ ভিসা দেওয়া হয়। গ্রুপ ভিসার জন্য দীর্ঘদিন ধরেই দূতাবাসের সত্যায়ন বাধ্যতামূলক।
একক ভিসার ক্ষেত্রে এই সত্যায়নের নিয়ম শিথিল ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে অভিযোগ উঠেছে, অনেক কর্মী কাজ বা এমনকি বৈধ ‘ইকামা’ (ওয়ার্ক পারমিট) ছাড়াই সৌদিতে পৌঁছাচ্ছেন।
এই সত্যায়ন প্রক্রিয়ার উদ্দেশ্য হলো চাকরির প্রস্তাব যাচাই করে প্রতারণা বা কর্মীদের শোষণের ঝুঁকি কমানো।
বিএমইটির এক সাম্প্রতিক বিবৃতিতে বলা হয়, নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিত করার জন্য ফরেন এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড মাইগ্রেশন অ্যাক্ট ২০১৩ ও ২০১৭-এর আলোকে এই সত্যায়ন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
প্রথমদিকে রিয়াদ দূতাবাস দ্রুত ভিসা প্রক্রিয়া করে সৌদি শ্রমবাজারে প্রবেশ সহজ করেছিল, কারণ সৌদি আরব বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার। তবে কাজের পরিবেশ খারাপ হওয়া এবং অনেকের আগেভাগে দেশে ফিরে আসার ঘটনায় এই যাচাইকরণ প্রক্রিয়া এখন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। দক্ষতা বাড়াতে দূতাবাস একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম চালু করেছে, যার মাধ্যমে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো অনলাইনে নিয়োগপত্র সত্যায়ন করতে পারছে। অভিবাসন আরও নিরাপদ ও দ্রুততর করতে বিএমইটি সব এজেন্সিকে এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের আহ্বান জানিয়েছে।
এদিকে, বাংলাদেশ মার্চে একক মাসে রেকর্ড ৩.২৯ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পেয়েছে। এর আগে এক মাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছিল গত বছরের ডিসেম্বরে, ২.৬৪ বিলিয়ন ডলার।
ফেব্রুয়ারিতে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ২.৫৩ বিলিয়ন ডলার—যা একক মাসের হিসাবে চতুর্থ সর্বোচ্চ।
ব্যাংকাররা বলেন, রমজান ও ঈদুল ফিতরের আগে রেমিট্যান্সের চাপ এবং অবৈধ হুন্ডি চ্যানেলের ব্যবহার কমে আসাই এই রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির বড় কারণ।