
‘সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ৫০ জন যাত্রী ও ক্রু নিয়ে এবিসি-১২৩ এয়ারলাইন্সের একটি উড়োজাহাজ (আলফা-৫৬৭) অবতরণের পর রানওয়ে থেকে ছিটকে আগুন ধরে গেছে। তাৎক্ষণিক সংশ্লিষ্ট সবাই আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। উড়োজাহাজ থেকে ৭ জনকে জীবীত উদ্ধার করা গেলেও ৫ প্রাণহানি ও ৩ জন আহত হয়েছেন।’
বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ‘পূর্ণাঙ্গ অগ্নি নির্বাপন মহড়া-২০২৫’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সে মহড়ায় এমনই প্রতীকী চিত্র উপস্থাপন করা হয়েছে।
মহড়ায় দেখা যায়, ৫০ জন যাত্রী এবং ক্রু নিয়ে এবিসি-১২৩ এয়ারলাইন্সের একটি উড়োজাহাজ (আলফা-৫৬৭) ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়েতে অবতরণ করে। অবতরণের পর পরই বিমানটি অপ্রত্যাশিতভাবে রানওয়ে থেকে সরে ট্যাক্সিওয়ে আলফা ও ব্রাভোর মাঝামাঝি ২০০ ফুট দূরে কার্গো অ্যাপ্রোনের সামনে গিয়ে ছিটকে পড়ে।
এসময় দেখা যায়, ছিটকে পড়ার পরই উড়োজাহাজের ডান পার্শ্বের ইঞ্জিনে আগুন ধরে যায়। মুহূর্তের মধ্যে কন্ট্রোল টাওয়ার বিষয়টি খোঁজ নেন এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ক্রাস এলার্ম সুইচ অন করার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সবাইকে অবগত করে। সেইসঙ্গে কন্ট্রোল টাওয়ার বিমানবন্দরের ফায়ার স্টেশন, অত্র বিমানবন্দর পরিচালক, স্যাটো, স্টেশন ফায়ার অফিসারকে তাৎক্ষণিকভাবে অবগত করে।
জানা গেছে, আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী বিমানবন্দরে দুর্ঘটনাপ্রবণ পরিস্থিতিতে বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে সমন্বয় নিশ্চিত করা, ফায়ার ক্রুদের দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি যন্ত্রপাতির কার্যকারিতা যাচাই করা এবং উদ্ধার কাজের সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নিশ্চিত করাই ছিল এ মহড়ার উদ্দেশ্য।
মহড়ায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনী, বাংলাদেশ নৌবাহিনী, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, পুলিশ, আনসার, বিএনসিসি, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, র্যাব, এপিবিএন, বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, ইউএস বাংলা এবং নভোএয়ারসহ বিভিন্ন সংস্থা একযোগে অংশ নেয়।
এসময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া। তিনি বলেন, আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিয়মিতভাবে এমন মহড়া আয়োজন করা হয়। এই ধরনের মহড়া জরুরি মুহূর্তে বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে কার্যকর সমন্বয়ের মাধ্যমে দ্রুততার সঙ্গে জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মঞ্জুর কবীর বলেন, সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে আমরা বিমানের অগ্নি নির্বাপন ও যাত্রী উদ্ধার তৎপরতায় প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। একইসঙ্গে এর মাধ্যমে আমরা আমাদের প্রস্তুতিকে আরও শাণিত করার সুযোগ পাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন সম্প্রতি, ২০২৪ সালের ২৮ ডিসেম্বর আজারবাইজান, ২৯ ডিসেম্বর দক্ষিণ কোরিয়া, এবছরের ৩০ জানুয়ারি আমেরিকা এবং ১৮ ফেব্রুয়ারি কানাডাসহ কয়েকটি দেশে বিমান দুর্ঘটনা ঘটেছে। এই বাস্তবতা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় পূর্ব প্রস্তুতি ও সম্মিলিত প্রচেষ্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই এ ধরনের মহড়া আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ায় এবং নিশ্চিত করে যে, সংকট মুহূর্তে দ্রুত ও কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে আমরা উদ্ভূত চ্যালেঞ্জ সফলভাবে মোকাবিলা করতে সক্ষম হব।
বেবচিক চেয়ারম্যান বলেন, যেকোনো অনভিপ্রেত ঘটনার জন্য আমাদের সবাইকে সর্বোচ্চ প্রস্তুত থাকতে হবে। তিনি সফলভাবে মহড়া পরিচালনার জন্য বিমানবন্দরের পরিচালকসহ সব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
মহড়ায় আরও উপস্থিত ছিলেন বেবিচক, ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং মহড়ায় অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন সংস্থার ঊধ্বর্তন কর্মকর্তারা।