ভারতের বিলাসবহুল এয়ারলাইনস হিসেবে পরিচিত ভিসতারা শেষ ফ্লাইট পরিচালনা করেছে গতকাল। এর মাধ্যমে নয় বছর প্রিমিয়াম পরিষেবা দেয়ার পর উড়োজাহাজ কোম্পানিটির বিলোপ ঘটল। খবর বিবিসি।
সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনস ও টাটা সন্সের যৌথ উদ্যোগ হিসেবে ফুল-সার্ভিস ক্যারিয়ার ভিসতারার যাত্রা ২০১৫ সালে। এখন থেকে স্বতন্ত্র অস্তিত্ব হারিয়ে টাটা মালিকানাধীন এয়ার ইন্ডিয়ার সঙ্গে একীভূত হচ্ছে ভিসতারা। যাকে ভারতের আকাশপথে নিজস্ব প্রিমিয়াম ব্র্যান্ডের সংকট হিসেবে দেখছেন অনেকে।
একীভূতকরণ চুক্তি অনুসারে, ভিসতারার পরিচালন কার্যক্রম এয়ার ইন্ডিয়ায় স্থানান্তর হচ্ছে, যার মধ্যে হেল্পডেস্ক ও টিকিট বিক্রির অফিসগুলোও অন্তর্ভুক্ত। কয়েক মাস ধরে ভিসতারায় বিদ্যমান বুকিং ও লয়্যালটি প্রোগ্রাম এয়ার ইন্ডিয়ায় স্থানান্তর করার প্রক্রিয়া চলছিল।
এয়ার ইন্ডিয়ার একজন মুখপাত্র ই-মেইল প্রতিক্রিয়ায় জানান, একীভূতকরণের অংশ হিসেবে খাবারসহ অন্যান্য সেবায় পরিমার্জন করা হয়েছে। এতে ভিসতারা ও এয়ার ইন্ডিয়া উভয় এয়ারলাইনসের পরিষেবাগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
দুটি কোম্পানি একীভূত হওয়ার ফলে সেবার মানে প্রভাব পড়তে পারে, এমন উদ্বেগের মধ্যে টাটা আশ্বস্ত করেছে যে ভিসতারার ইন-ফ্লাইট অভিজ্ঞতা অপরিবর্তিত থাকবে।
খাবার, সেবা ও কেবিন গুণমানের জন্য ভিসতারা বিখ্যাত। এর মাধ্যমে স্বতন্ত্র গ্রাহকশ্রেণী তৈরি করেছে এয়ারলাইনসটি। এ কারণে ভিসতারা ব্র্যান্ডের বিলোপের সিদ্ধান্তে ভক্ত, ব্র্যান্ডিং বিশেষজ্ঞ ও খাত বিশ্লেষকদের কাছ থেকে সমালোচনা পেয়ে আসছে।
এভিয়েশন বিশ্লেষক মার্ক মার্টিনের মতে, মূলত ভিসতারা আর্থিক সমস্যার সমাধানে একীভূতকরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে টাটা। আরো জানান, এয়ার ইন্ডিয়া বেকায়দায় পড়ে একটি লোকসান সহিষ্ণু এয়ারলাইন গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছে।
মার্ক মার্টিন বলেন, ‘সাধারণত একীভূতকরণের উদ্দেশ্য হলো এয়ারলাইনসগুলোকে শক্তিশালী করা। কখনো ক্ষতির পরিমাণ কমানো নয়।’
অবশ্য গত বছর এয়ার ইন্ডিয়া ও ভিসতারার বার্ষিক লোকসান অর্ধেকেরও বেশি কমেছে এবং পারফরম্যান্সের অন্যান্য সূচক উন্নত হয়েছে।
তবে নানা কারণে একীভূতকরণের পরিকল্পনা বিলম্বিত হয়। এর মধ্যে রয়েছে পাইলটের ঘাটতি, ফলে ব্যাপক ফ্লাইট বাতিল হয়েছে এবং এয়ার ইন্ডিয়ার সঙ্গে বেতন কাঠামো সমন্বয় করার পরিকল্পনার কারণে ভিসতারার কর্মীরা গণহারে অসুস্থতাজনিত ছুটি নেন।
এয়ার ইন্ডিয়ার সেবার মান নিয়ে অনেক অভিযোগ রয়েছে। একাধিকবার অনলাইন মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে ভাঙা সিট ও অকার্যকর বিনোদন পরিষেবার ভিডিও।
টাটা এক ঘোষণায় জানিয়েছে, পুরনো উড়োজাহাজের অভ্যন্তরীণভাগ পুনর্নির্মাণে ৪০ কোটি ডলার ব্যয় করবে। একদম নতুনভাবে এয়ার ইন্ডিয়ার ব্র্যান্ডিং করা হবে। পরিষেবা সম্প্রসারণ করতে এয়ার ইন্ডিয়া সম্প্রতি শতাধিক এয়ারবাস ও বোয়িং উড়োজাহাজের ক্রয়াদেশ দিয়েছে।
তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এ একীভূতকরণ অসম্পূর্ণ ও সমস্যাপূর্ণ। এটি ব্র্যান্ডিংয়ের দৃষ্টিকোণ থেকেও সংগতিপূর্ণ নয়। ব্র্যান্ড স্ট্রাটেজি বিশেষজ্ঞ হরিশ বিজুরের মতে, এখানে উন্নত মানের ভিসতারা ভুক্তভোগী হবে। এয়ারলাইনস কোম্পানিটি ভারতীয় উড়োজাহাজে গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড তৈরি করেছিল। কিন্তু একীভূতকরণের ফলে তা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
এ বিশ্লেষকদের মতে, ভালো কৌশল হবে এয়ার ইন্ডিয়াকে পাঁচ বছর আলাদাভাবে পরিচালনা করা। এ সময় সেবার মান বাড়াতে কাজ করবে কোম্পানিটি। অন্যদিকে এয়ার ইন্ডিয়া নামের সঙ্গে যুক্ত রেখেই ভিসতারাকে আলাদা ব্র্যান্ড হিসেবে পরিচালনা করা যেতে পারে।
বিশ্লেষকদের মতে, একীভূতকরণে আরেকটি প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো দুই কোম্পানির সংস্কৃতি। ভিসতারার কর্মীরা চটপট সেবা দিতে প্রস্তুত থাকে। অন্যদিকে এয়ার ইন্ডিয়া জটিল আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় পরিচালিত হয়। যার সঙ্গে মানিয়ে নিতে ভিসতারার কর্মীরা সমস্যায় পড়তে পারেন।
এছাড়া নতুন ক্যারিয়ারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে গ্রাহককে একক অভিজ্ঞতা প্রদান করা। মার্ক মার্টিনের মতে, কেবিন ফরম্যাট, ব্র্যান্ডিং ও গ্রাহক অভিজ্ঞতার সমন্বয় হবে এতে, যা জটিল একটি প্রক্রিয়া।
অনেক যাত্রীর কাছে ভিসতারার বিলোপ ভারতের আকাশে ফুল সার্ভিস ক্যারিয়ারের শূন্যস্থান তৈরি করবে। এর আগে প্রিমিয়ার সেবা দেয়া কিংফিশার এয়ারলাইনস ও জেট এয়ারওয়েজের পতন ঘটে। অন্যদিকে বিভিন্ন জরিপ অনুসারে, এয়ার ইন্ডিয়ার প্রতি গ্রাহক আস্থা প্রায় তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে।