হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর মানেই লাগেজ পেতে কতক্ষণ সময় লাগবে, সেই প্রশ্ন সামনে চলে আসত। এ ছাড়া কখনো কাটা লাগেজ আবার কখনো ভাঙা, কখনো আবার লাগেজ ঠিক আছে কিন্তু ভেতরের জিনিসপত্র নেই- এমন অভিযোগ ছিল বারবরই। তবে গত বুধবার সৌদি আরব থেকে দেশে ফেরা সৈয়দ নাসির উদ্দিন বলেন, ‘আমি আজ অবাক হয়েছি। আমি সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে প্লেন থেকে নেমেছি, আর লাগেজ পেয়েছি ৯টার কিছু আগে। বলতে গেলে আধা ঘণ্টায় লাগেজ পেয়ে গেছি। তাও আবার কোনো সমস্যা ছাড়াই। জিনিসপত্র সব ঠিক আছে দেখলাম।’
গত বুধবার ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গিয়ে দেখা যায় লাগেজ ব্যবস্থাপনার এমন চিত্র। কয়েক মাস ধরেই গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে জানা যাচ্ছে, উন্নত হয়েছে শাহজালালের সেবার মান। বিশেষ করে লাগেজ ব্যবস্থাপনায় এসেছে দারুণ পরিবর্তন। এ বিষয়ে ওই দিন ভারত থেকে ফেরা যাত্রী মীর মিথুন বলেন, ‘আমি সত্যিই খুব অবাক হয়েছি। উড়োজাহাজ থেকে নেমেই দেখি লাগেজ কাউন্টারে চলে এসেছে। এটি খুব ভালো লেগেছে।’
ওই দিন বেলা ৩টায় মাকসুদা আক্তার জেদ্দা থেকে ফিরেছেন তার পরিবার নিয়ে। এ সময় তাদের সঙ্গে ছোট-বড় মিলে ছয়টি লাগেজ ছিল। লাগেজ পেতে কত সময় লেগেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা সবগুলো লাগেজই কাউন্টারে আসার পর ১০ মিনিটে পেয়ে গেছি। সেবার মান আগের থেকে অনেক ভালো হয়েছে।’
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের দাবি, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস তাদের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির বহর বড় করেছে। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে অতিরিক্ত জনবলও। ফলে বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংসহ সব ধরনের সেবার মানই আগের থেকে উন্নত হয়েছে।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক বোসরা ইসলাম বলেন, গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সক্ষমতা বাড়াতে বিভিন্ন ধাপে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার যন্ত্রপাতি কেনার প্রক্রিয়া চলমান আছে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু যন্ত্রপাতি বহরে যুক্ত হয়েছে। গ্রাউন্ড সার্ভিস ইক্যুইপমেন্ট (জিএসই) বহরে ফ্রান্স থেকে সদ্য আমদানি করা ছয়টি ব্র্যান্ড নিউ বেল্ট লোডার সংযোজিত হয়েছে। এই বেল্ট লোডারগুলো ছোট ও মাঝারি মাপের উড়োজাহাজ যেমন- বোয়িং ৭৩৭, বোয়িং এ-৩২০ এবং ড্যাশ-৮ উড়োজাহাজে কার্গো ও ব্যাগেজ উত্তোলন ও অবতরণকাজে ব্যবহৃত হবে। এ ছাড়া বিমানের জিএসই বহরে বর্তমানে দুই হাজারের মতো মোটরাইজড ও নন-মোটরাইজড ইক্যুইপমেন্ট রয়েছে। হাইলোডার, কনটেইনার প্যালেট ট্রান্সপোর্টার, এয়ার কন্ডিশনিং ভ্যান, প্যাসেঞ্জার স্টেপ, ওয়াটার কার্ট, ফ্লাশ কার্ট, এম্বুলিফটসহ অন্যান্য ইক্যুইপমেন্ট কেনার প্রক্রিয়াও চলমান রয়েছে। থার্ড টার্মিনালকে কেন্দ্র করে নতুন নতুন ইক্যুইপমেন্ট কেনার পাশাপাশি জিএসই অপারেটর, মেকানিক নিয়োগ এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জিএসই বিভাগের সক্ষমতা বহুগুণ বাড়ানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
মাকসুদা আক্তার আরও বলেন, যাত্রী অপেক্ষাগারের পরিবেশ ভালো। বিদেশ থেকে ফিরে অনেক সময়ই গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে হয়। এই লাউঞ্জটি হওয়ায় ভালো হয়েছে। যাত্রীরা এখানে ভালো পরিবেশে অপেক্ষা করতে পারবেন।
মাসখানেক আগে ওই ওয়েটিং লাউঞ্জের উদ্বোধন করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে শাহজালাল বিমানবন্দরের মাল্টিলেভেল কার পার্কিং এলাকার দ্বিতীয় তলায় এই প্রশস্ত ওয়েটিং লাউঞ্জ নির্মাণ করা হয়েছে। নতুন এই লাউঞ্জে যাত্রীদের অপেক্ষা করার কক্ষ, বেবি কেয়ার কক্ষ, নারী-পুরুষ উভয়ের আলাদা ইবাদতখানা এবং ক্যাফেটেরিয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
এখানে আগমনী ক্যানোপি থেকে বের হয়ে যাত্রীরা তাদের স্বজন অথবা গাড়ির জন্য যেমন অপেক্ষা করতে পারবেন, তেমনই স্বজনরাও যাত্রী না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারবেন। আবার অনেক সময় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা যাত্রীরাও ফ্লাইট মিস না করার জন্য আগে আগে বিমানবন্দরে এসে পড়েন। কিন্তু তারা ভেতরে ইমিগ্রেশনের জন্য ঢুকতে পারেন না। ফলে তারাও এখানে অপেক্ষা করতে পারবেন।
এ ছাড়া প্রবাসী রেমিট্যান্স-যোদ্ধাদের জন্য প্রবাসী লাউঞ্জ এবং নতুন-পুরোনো সব যাত্রীর সহযোগিতার জন্য আগমন ও বহির্গমন এলাকায় তাদের তথ্য ও দিকনির্দেশনা দিতে নতুন করে হেল্পডেস্ক স্থাপন করা হয়েছে। বিমানবন্দরের আন্তর্জাতিক বহির্গমন এলাকার গেটের সামনে দেখা যায় রেমিট্যান্স-যোদ্ধাদের প্রবাসী লাউঞ্জসহ ভেতরের এসব সুবিধা নিতে সচেতন করছেন নিরাপত্তাকর্মীসহ স্বেচ্ছাসেবকরা।
হেল্পডেস্ক ছাড়াও যাত্রীরা যাতে যেকোনো তথ্য, পরামর্শ পেতে পারেন এবং অভিযোগ জানাতে পারেন সে জন্য চালু করা হয়েছে ১৩৬০০ ও ০৯৬১৪০১৩৬০০ ফোন নম্বর। www.hsia.gov.bd ওয়েবসাইটে গিয়েও অভিযোগ জানাতে পারবেন যাত্রীরা।
এ বিষয়ে শাহজালাল বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মো. কামরুল ইসলাম বলেন, “বিমানবন্দরের সেবার মান উন্নত করতে কাজ করে যাচ্ছি। এরই অংশ হিসেবে যাত্রীদের যেকোনো তথ্য ও অভিযোগ জানানোর জন্য ‘১৩৬০০’ নম্বরের কল সেন্টার, নতুন ওয়েব পোর্টাল (www.hsia.gov.bd), কাস্টমার রিলেশনশিপ মডিউল সফটওয়্যারসহ আরও নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত আমরা ১০ হাজার কল পেয়েছি এবং সম্মানিত যাত্রীদের দ্রুত সময়ে সেবা দেওয়ার চেষ্টা করেছি।”
তিনি আরও বলেন, ‘যাত্রীদের সহযোগিতা করতে হেল্পডেস্কসহ বিমানবন্দরের সব ধরনের সেবা আগের চেয়ে অনেক বেশি সক্রিয় হয়েছে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস যেহেতু এই বন্দরের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের জন্য নতুন অনেক সরঞ্জাম এনেছে, তাই যাত্রীরা যেন দ্রুত সময়ে লাগেজ পান, সে জন্য তারা কাজ করছেন। পাশাপাশি প্রবাসী লাউঞ্জ থেকেও আমরা ভালো সাড়া পাচ্ছি। বিশেষ করে যাত্রীদের জন্য যেসব সেবা আনা হয়েছে, সেগুলো সম্পর্কে তাদের জানানো হচ্ছে।’